Trilochan Shahito Vubon - ত্রিলোচন সাহিত্য ভুবন v


সুমনা পাল > ‎:ত্রিলোচন সাহিত্য ভুবন:

(তন্দ্রাকাশ)——
-মেঘ দেখবা?
-না।
-আকাশ দেখবো চলো,তুমি আর আমি।
 চলো তোমাকে ছাদে নিয়ে যাই!
-না আমি ছাদে যাবো না।
 কোনোদিন না।
-কেনো?
-আমার ভালো লাগে না।
-আমার সাথেও যাবেনা?
-আমি একটু আকাশ দেখতে
 চেয়েছিলাম সেদিন।খুব যত্ন করে
 বলেছিলাম, আমাকে একটু আকাশ
 দেখাবা তন্দ্রা?
-আকাশে অনেক মেঘ আছে তাইনা
 দূতি?
-কে বলেছে তোমাকে?
-তন্দ্রা বলেছিলো।
-তন্দ্রা কে?
-কাছের কেও ছিলো।
-কেমন কাছের?
-আমার ভেতরটা ছিলো তন্দ্রা,আজও
 আছে,সারাজীবন থাকবে।
-ও তন্দ্রা তোমার ভালোবাসার মানুষ?
আর কি বলেছে তোমাকে?
-আমি কোনোদিন আকাশ
 ভালোবাসতাম না,বৃষ্টি ছুঁয়ে
 দেখিনি কখনও।চাঁদ উঠলে ঘরে বসে
 থাকতাম।কেনো জানি এসব ভালো
 লাগেনা আমার।আমি বরং ঘরের
 কোনে তন্দ্রার ছবি আঁকতাম। তন্দ্রাই
 ছিলো আমার আকাশ,পৃথিবী।
 আমার মনে হতো ওর মুখটাই প্রকৃতি।
 আমার সমস্ত ভালোলাগার নিখুঁত সৃষ্টি
 তন্দ্রা।
-তুমি ওকে অনেক ভালোবাসো?
-অনেক ভালোবাসতাম এখন আরো
 বেশি ভালোবাসি,পাগলের মতো।
-তোমার চশমাটা অনেক সুন্দর।
-তন্দ্রার দেওয়া।
-তোমার তন্দ্রা কোথায়?দেখাবে
 আমাকে?
-না।
-ওনার বাসার নাম্বার টা দাও।
-দিলেও যেতে পারবে না।
-কোথায় বলো একবার?
-ওর বাড়ি আকাশে।আমিও চলে যাবো
 ওর বাড়িতে।তন্দ্রা অপেক্ষা করছে
 আমার জন্য।
-এসব কি বলছো পাগলের মতো?
-পাগলের কষ্ট বুঝো দূতি?
পাগলদের অনেক কষ্ট জানো?কেও বুঝে
 না।
 সেদিন পাগলামী করেছিলাম তন্দ্রার
 সাথে।ওর মনটা ভীষন খারাপ ছিলো।
 ওর ফ্রেন্ডগুলো প্রায়ই আমাকে নিয়ে
 আজেবাজে কথা বলতো।ও আমাকে
 ধরে খুব কাঁদতো,খুব কাঁদতো।আমাকে
 বলতো:জয় তুমি এমন কেনো?কেনো তুমি
 আকাশ ভালোবাসো না?বৃষ্টি ছঁও
 না,চাঁদ দেখো না?
জানো সবাই আমার সামনে তোমাকে
 পাগল বলে।
-জানো দূতি আমার পাগলী তন্দ্রাটা
 বুঝতেই চাইতো না ওই আমার আকাশ।
 কত্তবেশি ভালোবাসি এই
 আকাশটাকে।
 আচ্ছা মানুষের তো মাথার উপর একটাই
 আকাশ,আর সেই আকাশ যদি আমি
 ভালোবাসার মানুষটিকে ভাবি
 ক্ষতি কি তাতে বলোতো?সবাইকে
 কি শুধু মাথার উপরের আকাশটাকেই
 ভালোবাসতে হবে প্রকৃতি ভেবে!
আমি না হয় এক পৃথিবীর মানুষকেই
 আকাশ ভাববো।আদর করে
 ভালোবাসবো।তন্দ্রা পাগলীটা শুধু
 অভিমান করতো ওর ফ্রেন্ডদের কথায়।
 একদিন কলেজ শেষে বাসাই এসে সে
 কি কান্না,ফোন দিয়ে বলছে:তুমি
 এখনি ছাদে আসো বৃষ্টিতে ভিজো,
একটু আকাশ দেখো।
 আমি সবসময় আকাশ দেখি, আমার
 তন্দ্রাকাশ।পাগলীটা বুঝে না।শুধু জেদ
 করে উল্লুক সব মানুষের কথায়।
-তারপর তুমি বৃষ্টিতে ভিজেছো?
-তন্দ্রা খুব কাঁদছিল তখন,চোখের জল
 মাটিতে পড়তে দেইনি,ঐ চোখের
 জলে বৃষ্টি ভেবে ভিজেছিলাম আমি।
 অনেক দিন রাগ করে ছিলো, কথা
 বলেনি।আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল ওকে
 ছাড়া।আমি ঘরে বসে সারাক্ষন ওর
 ছবি এঁকেছি,চল্লিশখানা ছবি এঁকেছি
 আমার তন্দ্রাবতীর।
 সোমবার সকাল।ভাবলাম আজ তন্দ্রার
 কাছে যাবো।ভূলটা হয়তো আমারি।
 আমি আসলেই হয়তো কেমন!!
-তন্দ্রা বাগানে বসে আছে,মনটা
 খারাপ।
 আমি যেতেই ও একটুও অবাক ছিলো
 না,এই ক'দিন কিছুই হয়নি এমন মনে হচ্ছে।
 আমাকে আস্তে করে বলছে আমাকে
 একটু বুকে নিবা জয়?আমি একটু আকাশ
 দেখবো তোমার বুকে শুয়ে।
 আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ও
 কি বলছে এসব!!
আমি বল্লাম ছাদে চলো আজ আমিও
 আকাশ দেখবো।
 তন্দ্রা আর ওর মধ্যেই ছিলো না
 সেদিন,আমার তন্দ্রাকাশে সেদিন
 কালো মেঘ ছিলো।
 আমরা ছাদে গেলাম আকাশ দেখতে।
 তখন সন্ধ্যা সাতটার মতো হবে।
 ছাদের সাইডে গিয়ে দাঁড়ালাম।
 তন্দ্রা বল্লো ঐ যে দেখো আকাশ
"""দেখতে পাচ্ছো?চাঁদটা দেখো কত
 সুন্দর।
 আচ্ছা জয় আকাশে কি করে যেতে হয়
 জানো?
-আমি জানতে চাই না।শুধু জানি আমি
 তোমাকে অনেক ভালোবাসি তন্দ্রা।
 আমাকে একটা চশমা দিলো তন্দ্রা,
চশমা পড়লে নাকি আমাকে বেশি
 ভালো লাগে।ওর হাতেই চশমাটা
 পড়লাম।
-ও এবার বলছে,ঐ যে দেখো আকাশে
 একটা বাড়ি,অনেক সুন্দর তাইনা জয়?
-আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না,সব কেমন
 আবছা লাগছিল।সবকিছু কেমন নিস্তব্ধ।
 হঠাৎ,
আমি চশমাটা খুলতেই দেখি ও আর
 নেই,
আমার আকাশটা মাটিতে পড়ে গেছে
,আমি ওকে বাঁচাতে পারিনি দূতি!
আমি আর কোনোদিন আকাশ দেখবো
 না,ঐ দূরের আকাশটা আমার নিজের
 তৈরি আকাশটাকে ছিনিয়ে
 নিয়েছে।
 সেদিন তো পা পিছলে আমার পরার
 কথা ছিলো,মাথার উপরের আকাশটা
 বড্ড খারাপ।বড্ডবেশি নির্দয়।
 আকাশ আমি ঘেন্যা করি
 তোমাকে,কোনোদিন আমি
 তোমায় ভালোবাসবো না।
——ফিরে এসো তন্দ্রা,
আমার আকাশে একটা সুন্দর বাড়ি
 বানাবো তোমার জন্য।

No comments:

Post a Comment