ত্রিলোচন সাহিত্য ভুবন v

{সীমাবদ্ধ দৃষ্টি}

রাণু সরকার

======================== 

কোনোদিন দেখিনি দূরে মেঘে ঢাকা আকাশ,

হয়তো এই জীবনে হবেনা দেখা;

ভোরে দেখবো বলে ঠিক করি, কুহেলীকায় ঢাকা থাকে-

আমার দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অতো দূরে যায় না দৃষ্টি;

একা ভয় লাগে পা পিছলে যদি পড়ে যাই-

দেখতে চাই সহজপাচ্য রমণীয় সমুদ্রবাহু,

দেখালে বিশাল জলপ্রপাত দেখাতে হবে।

মধ্যবর্তী স্থানে নিয়ে দেখাতে হবে!

আমার দৃষ্টি কিন্তু সীমাবদ্ধ-

কলাকৌশলে অভিজ্ঞ দেখাতেই পারো;

দেখতে চাই দূরের গুপ্ত রহস্য!!

 প্রশ্ন 

রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায় 


এখন সময় করতলে দাঁড় করিয়ে রেখেছে গতিশীল চঞ্চল শহরটাকে  

ক্রমশ যেন ফুরিয়ে আসছে তার উৎসবের পরমায়ু

,দুধ , গঙ্গাজল, তুলসী গাছ শিয়রে তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছে 

একতারা হারিয়েছে বাবাজী বাউল 

 দিশাহীন  যন্ত্রণায় গৃহিণীর ভালোবাসা কেমন উদাসিন ,চোখ তার ফ্যাকাসে 

অরন্যের গাছপালা মৌন চাপা কান্নায়

 নক্ষত্রগুলি ঝুলে পড়েছে সরস পৃথিবীর অভিমুখে

 কেঁপে কেঁপে উঠছে ধামসা মাদলের আওয়াজ অন্তরাত্মা কাঁদছে  কৌপিন হারানোর ভয়ে

 এতদিন মুঠো মুঠো আনন্দ ছড়াচ্ছিল পৃথিবী

 বাতাস খুঁজে বের করে আনছিল সুখ

তাও সমুদ্রগর্ভে বিলীন হচ্ছে সন্তাপে 

নিরুত্তাপ ছিল ক্ষুধাগ্নি

 কেন জানিনা কোন বেরসিক আকস্মিক বয়ে নিয়ে এলো এক আকাশ মুখভার করা কালো মেঘ স্বদেশ তথাপি নয় শৃঙ্খলা পরায়ণ

 নইলে কেন পাওয়া যায়না  প্রেমিক প্রেমিকার বিশুদ্ধ প্রেম 

কেন পাওয়া যায় না প্রকৃত দেশ প্রেমিক

 কেন পাওয়া যায় না দুঃখ দারিদ্র নেভানো আলো।  



প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল

সুবর্ণা কর্মকার

প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল

প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল, যেদিন তোর আঁখিতে আমার নামে শ্রাবণ ঝরেছিলো।

সে শ্রাবনে ভিজে ছিলাম আমি, তোর চোখের কালো দ্বীপে হদিশ খুঁজেছিলাম অবশেষে।

প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল,
যেদিন তোর ঠোঁটের মানচিত্রে দ্রাঘিমারেখা গুলো গুনে দেখতাম, 
তোর ভেজা চুলের সুবাসে নিজেকে সুগন্ধি করে তুলতাম।

আমার নিঃশ্বাস জুড়ে হয়তো এখন অখন্ড নীরবতা গোলাকার ধরণী জুড়ে রয়েছে শুধু তোর আগমনী,

প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল,
যেদিন তোর মায়াবী ছায়ার সুপ্ত অবসরে, ঘুমহীন ক্লান্তির ছাপ টা চুম্বনের আকারে মিলিয়ে দিতাম।

যেদিন তোর ঠোঁটের নিকোটিনের বিচ্ছুরিত ধোঁয়া টা অপেক্ষা করত আমার আগমনের জন্য।

আজ হইতো প্রেম টা রয়ে গেছে,
শুধু বদলে গেছে প্রেমের ধরন;
এখন তোর মুঠো মুঠো স্বপ্নের রাজ দরবারে
আর তো ঘটে না আমার নামে অভিস্রবণ।

এখন প্রেমটা শুধু আমার একার,

তুই তো ভুলে গেছিস এখন,
আমি এখন তোর কাছে কাঁটা যুক্ত ক্যাকটাসের ন্যায়,
্যস্ট্রেতে যেভাবে নিকোটিনের ছাই ফেলে অবশেষে।

পরাধীনতার নাগপাশে 

-রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়



ইসিজি রিপোর্টে কে গ্রাফটি এঁকেছিল যন্ত্র

 তাতে ধরা পড়েছিল মানবিকতাবোধ হৃদয় থেকে বেরিয়ে গেছে গঙ্গা জলে ; মহাদেব গঙ্গাকে জটা থেকে মুক্তি দেওয়ায় নরকুলে প্রচুর বিপত্তির চর জেগে উঠেছে দেখে কপিলমুনি অহর্নিশ তপস্যা শুরু করে দেন , দীর্ঘ তপস্যার পর যখন মানুষের মনুষ্যত্ববোধকে তিনি ফেরাতে পারলেন না তখন বাতাস রটনা করে দিল মানুষ আজ অমানুষের দলে ; এই কথা শুনে দানবেরা সহিংস নৃত্য শুরু করে দিল হাঁস,মুর্গী, কোকিলের অঙ্গনে ।সংখ্যায় এরা ভারি বুঝে সত্য নারায়ণ বাবু স্বদেশ থেকে পলায়ন করলেন ,মিথ্যেবাবু রাজাসনে বসে পাকাপোক্ত দলিলে ফরমান চালাতে থাকলো; শয়তান অন্ধকার বেচারা দিনের আলোয় ভদ্রলোকের মুখোশ পড়ে চাণক্যের শ্লোক আওড়াতে থাকলো আর পোঁ-ধরা ডাক্তার বাবু সকলের বুকে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে কানে শুনতে থাকলো নর নারীর হৃৎস্পন্দন । ছন্দবদ্ধ হৃদস্পন্দন নয় জেনে মিথ্যে বাবু রাস্তাঘাট হাট-বাজার বন্ধ করে দিয়ে হুঙ্কার ছাড়তে লাগলো , হুঙ্কারের শব্দে গাছের পাতা ঝরে পড়লো ,ফুল আর পাপড়ি মেলল না, নদী উজানে বইতে শুরু করল ,পরাধীনতার নাগপাশে বিষন্ন হলো প্রাকৃতিক মন ;এটাই ছিল আহাম্মকের প্রথম পর্বের প্রথম কড়চার প্রথম সোপান ।

রস-তত্ত্ব

অরুণ কুমার ঘোষ

রস খুঁজে ফেরো তুমি রস নেই বনেতে

রস আছে জেনো ভাই রসিকের মনেতে। 

রসগোল্লার রস একটুও ভালো নয়

সুগারের সহোদর এতে নেই সংশয়। 

কাঠে কত রস পায় পাখি কাঠঠোকরা

মনোসুখে বিড়ি ফুঁকে রস পায় ছোকরা। 

দুধে নয়, মদে রস তাতে নাই সন্দ

দুধ বেচে মদ খায় গোয়ালা যে নন্দ। 

সত্তরে শাদি করে শুকুরালি রস পায়

বোষ্টম রস পেতে বোষ্টমীর পিছু ধায়। 

নিমপাতা রস দেয় তবে ভাই তিক্ত

নাক চেপে খেয়ে দেখো হবে রোগমুক্ত। 

রাধে আর কেষ্টর আছে বড়ো লীলা-রস

নিষ্কর্মার দল হয়ে পড়ে এতে বশ।

রাজনীতি-রস খেয়ে নেতা হয় চাঙ্গা

এই রসে জনতা কত করে দাঙ্গা। 

রেশনের চালে রস তুল্য যে নাই তার

রাজনীতি নেতারা খেয়ে যায় বারবার।

আমফানি কাটমানি ঘুষে রস মস্ত

তাই আজ নেতারা এতে বড়ো ব্যস্ত। 

আরও ভাই আছে রস মহামারী করোনায়

নার্সিং হোমগুলো দুহাত ভরে নেয়। 

আহা মরি! কত রস আছে সব ধর্মে

এই রস পেতে সব মাতে কত কর্মে।

শাসকেরা রস পায় স্বজনের পোষণে

সবচেয়ে বেশি রস গরিবের শোষণে। 

বলতে যে পারি আমি আরও রস তত্ত্ব

লেগে যাবে আঁতে ঘা হবে উন্মত্ত। 

গলাটিপে ঝুলিয়ে দেবে ওই গাছটায়

পরিবার পরিজন করবে যে হায়! হায়!

আরও কত পাচ্ছি যে বিপদের গন্ধ

তাই এই রসালাপ করিলাম বন্ধ।

 সুন্দরী 

  পারভীন শীলা 


সুন্দরী তুমি,

জোছনার আলোর মতো স্বচ্ছ

প্রকৃতির মতো নির্মল

চাঁদের মতো সত্য।

সুন্দরী তুমি,

চির যৌবনা স্বর্ণালী সকাল

মায়াবী বিকেলের স্নিগ্ধতায়

ঘেরা

অপূর্ব বাংলার অবয়ব।

কবিগুরু

অলোক নস্কর


হাজার লিখি হাজার পড়ি 

   হাজার বিষয় ভাবি ,

      কে-যে কত মহান লেখক

          হরেক রকম দাবি ,

             বড়ো লেখক ছোট লেখক

               তর্কযুদ্ধ চলে ,

                  নানা মানুষ নানান রকম

                     নিজের মতো বলে ,

                        আমি কেবল একটি নামে

                           হ‌ই-যে কুপোকাত ,

                              সে-তো রবীন্দ্রনাথ 

                                  রবীন্দ্রনাথ ।


আমি লেখক-কবি , নয়-তো জানি

   লেখার চেষ্টা করি ,

       ভালো কিছু বিষয় পেলে

          লিখতে কলম ধরি ,

              রবি ঠাকুর আছেন মাথায়

                ভয়-কে করবো জয় ,

                   সহজ সরল লিখবো আমি

                      কঠিন কিছু নয় ,

                         লিখছি আমি বহু রকম

                             করছে কুপোকাত ,

                                সে-তো রবীন্দ্রনাথ

                                    রবীন্দ্রনাথ ।


বিশ্বকবি গুরুদেবের

   চরণতলে বসি ,

     কবি গুরু আলো দেন

        উনি আমার শশী ,

           কবি গুরু পথ দেখাবেন

              ভাবনা আমার কিসে ,

                 কবি গুরুর পথের ধুলায়

                    চাই-যে যেতে মিশে ,

                       গুরুর সুরে সুর মেলাতে

                           হ‌‌ই-যে কুপোকাত ,

                              গুরু আমার রবীন্দ্রনাথ

                                  রবীন্দ্রনাথ ।