Trilochan Shahito Vubon - ত্রিলোচন সাহিত্য ভুবন: August 2020 v

কবিতা

"পিঠে"

অঞ্জলি দে নন্দী, মম


ঐরাবৎ হাতীর পিঠে

বসে নন্দী ষাঁড়ের নাতী।

যাচ্ছে খেতে সে

হরেক রকম পিঠে।

নামলো এসে

নানীর ঘরের শেষে।

নানা ভালোবেসে

ওর পিঠে

হাত চাপড়ায়, আদোরে।

আর বলে,

যুগ যুগ যুগ তুম জিও!

তাই না দেখে নৃত্য করে

নানার যত পোষা বাঁদরে।

নানী বানায়

নাতীর প্রিয়

তালের মিঠে পিঠে

নিজ করে। ( হাতে )

আহা, সুখে ভরা ভাদোরে,

নানা, নানীর নাতী আদোর করা,

এতেই তো ধরা গড়া।

নানীর হৃদয় মহাসাগরসম।

নাতীর তরে স্নেহ তার ভরা 

কানায় কানায় কানায়।

নাতী থাকে নানার হার্ট বিটে।

ওদের সবার প্রিয় নাতীর মমও।

সোনা বন্ধু

রাণু সরকার

============  

শোন কোকিলা-

ওপারেতে-সোনা বন্ধু আছে একেলা, 


আমার কথা বলবি তাকে চিন্তা যেন না করে 

ভালো আছি-কিন্তু তার জন্য মনটা আমার আনচান করে!


এই নে--চিঠি-সাবধানেতে পৌছে দিস

যদি বন্ধু আমার ঘুমিয়ে থাকে-জাগিয়ে তবেই তার হাতে দিস,


চিঠি পড়ে সোনা বন্ধুর জল আসবে চোখের কোলে-

ঠোঁটে করে খানিকটা জল আনবি তুলে!


বন্ধু আমার যাবার বেলায়-সোহাগ চিহ্ন এঁকে দিতে গেছে ভুলে!

ঠোঁটের থেকে একটু লালা আনবি তুলে!


আমার হয়ে এক কলি গান শুনিয়ে দিস

এই-কোকিলা কাজটা যদি করে দিস 

আমার বাতাবি লেবুর গাছটি তুই নিয়ে নিস 


মেঘেদের বেড়েছে-খুব আনাগোনা

কখন বর্ষাকে যে পাঠিয়ে দেবে-ওদের কথা বলা যায় না ।


বর্ষা যদি আসে ধেয়ে 

পারবি কি তুই চিহ্ন গুলো আনতে বয়ে?

যতক্ষণ তুই না আসবি চিন্তা গুলো মাথায় আমার থাকবে ছেয়ে!

 


লঙ্কা কান্ড

অঞ্জলি দে নন্দী, মম

আচারী লঙ্কা

বাজিয়ে ডঙ্কা

খুব চেঁচিয়ে বলে,

আমার দেহ সবচেয়ে শ্রেয়।

আমার মত আর নাই তো কেহ।

ওর বড়ই অহংকা'  .......


তা শুনে

মুখ খেঁচিয়ে বলে

ধানী লঙ্কা,

আমি সবচেয়ে বড় আমার গুণে!


জবরদস্ত ঝগড়া করে দুজনে......

লংকাদের কান্ড দেখেশুনে

মনে মনে মনে

ভাবে জিভ জীবন্ত, শান্ত.......

ক্যানো ওরা মেতেছে এ আত্ম রণে?

আমি ছাড়া ওরা তো ভ্রান্ত।

 ধোয়াসা

কলমে বানীব্রত 



মাঝরাতে ভাঙলো ঘুমের ঘোর

চারিদিকে অন্ধকার  তার মাঝে হঠাৎ 

রাতের বোবা ফোনটায় জ্বলে উঠলো আলো

তারপর তার রিং টোন।


ঘুমোঘোরে অলস হাতে ধরা গলায় 

বললাম  হ্যালো 

অনেক দিন পর তোমার গলাটা 

না,  চিন্তে ভুল হয়নি আমার।


সুদুর আমেরিকা থেকে তোমার হঠাৎ মনে পড়ল..... আমাকে।

এখন তোমার  সকাল আর আমার গভীর রাত

সময় ঘুরে কতগুলো বছর পার করেছে শুধু,

কোন একদিন ধুমকেতুর মতো এসেছিলে

চলেও গেলে ধুমকেতুর মতো। 


না বলে চলে গিয়েছিলে সেদিন, আবার কেন ধুমকেতুর আগমন?

 তুমি আমার গলাটাও চিনতে পারনি সে সময়

আমি বলার পর তোমার চেতনা ফিরল,

আনেক কিছু বলার ছিল আমার,  না বলতে পারিনি, 

তুমিও কিছু জানতে চাওনি। 

ফোনটা কেটে গিয়েছিল আর আসে নি,

না সেই রাতে আর ঘুম ও আসেনি আমার চোখে,

একটা  ধোয়াসা থেকে গেল কেনই বা ফোন করলে আবার কেনই বা হারিয়ে গেলে,

ধোয়াসাই থেকে গেলো ধোয়াসার অন্তরালে,

ভালো থাকার মিথ্যে আশ্বাশনে।

 জীবনের কথা 

পারভীন শীলা 


শ্রাবণের মেঘে ঢেকেছে আকাশ,

পৃথিবীর বুকে ঝরেছে 

ফুটন্ত শিউলি, 

জীবনের সব কথা-

সাগরের ও পারে ডুবে যাওয়া সূর্যটার মতোই। 

নদীর তরঙ্গে লেখা হয়ে যায়

ঝরে পড়া কিছু জীবনের কথা,

বুকের সবটুকু কষ্ট নীল আসমানে

ভেসে বেড়ায় মেঘ হয়ে,

তারপর উড়ে উড়ে পৃথিবীর পরে

ঝরে পড়ে কষ্টের লোনা জল,

আকাশের বুক থেকে তখন বৈরী হাওয়া

শাঁই শাঁই শব্দে ছুটে আসে

পৃথিবীর খোলা দরজার ভীতর দিয়ে,

এ পৃথিবী তখন ম্রিয়মাণ! 

বিধবার সাদা শাড়ীর মতোই ফ্যাকাশে 

মুখখানি তার 

দূর্বিষহ জীবনের কথা কয়।

 {কদম শিউলি স্তব্ধ}

            রাণু সরকার

======================

বেগবানে এলে সোহাগকে সাথে নিয়ে,

অঙ্গনা প্রণয়ীণীর কাছে অনুরাগের যৌতুকে

গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরবে!

আকাশ পথে দু'জনের ভ্রমণ কল্পনার ডানা মেলে উড়ে উড়ে!

সুদূর নীল নভস্থলে বলাকারা দেখবে আমাদে উড়ে চলা সোহাগ,

সোহাগের ছোঁয়ায় শিহরিত দু'টি শরীরের শিরায়-শিরায় রক্তের গভীরে আনন্দে কাব্য স্রোত বয়ে চলা!

সোহাগের সমুদ্রে ডুবে দু'জনে সোহাগের অবগাহনে অনাবৃত বুকে চুম্বন এঁকে রঙ ধুনুর সাত রঙে রাঙিয়ে দিলো শরীর!

উজ্বল নক্ষত্র অরুন্ধতী দীপ্যমান সোহাগের ভরা বর্ষায়!

গভীর সোহাগে দু'জন ভিজছে কদম গাছের ছায়ায়!

থরথর কাঁপছে দুটি শরীর গভীর সোহাগের আবেগে!

অঙ্গনা প্রণয়ীণী ও পলিতকেশের গভীর সোহাগ দেখে কদম শিউলি স্তব্ধ!!

{সীমাবদ্ধ দৃষ্টি}

রাণু সরকার

======================== 

কোনোদিন দেখিনি দূরে মেঘে ঢাকা আকাশ,

হয়তো এই জীবনে হবেনা দেখা;

ভোরে দেখবো বলে ঠিক করি, কুহেলীকায় ঢাকা থাকে-

আমার দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অতো দূরে যায় না দৃষ্টি;

একা ভয় লাগে পা পিছলে যদি পড়ে যাই-

দেখতে চাই সহজপাচ্য রমণীয় সমুদ্রবাহু,

দেখালে বিশাল জলপ্রপাত দেখাতে হবে।

মধ্যবর্তী স্থানে নিয়ে দেখাতে হবে!

আমার দৃষ্টি কিন্তু সীমাবদ্ধ-

কলাকৌশলে অভিজ্ঞ দেখাতেই পারো;

দেখতে চাই দূরের গুপ্ত রহস্য!!

 প্রশ্ন 

রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায় 


এখন সময় করতলে দাঁড় করিয়ে রেখেছে গতিশীল চঞ্চল শহরটাকে  

ক্রমশ যেন ফুরিয়ে আসছে তার উৎসবের পরমায়ু

,দুধ , গঙ্গাজল, তুলসী গাছ শিয়রে তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছে 

একতারা হারিয়েছে বাবাজী বাউল 

 দিশাহীন  যন্ত্রণায় গৃহিণীর ভালোবাসা কেমন উদাসিন ,চোখ তার ফ্যাকাসে 

অরন্যের গাছপালা মৌন চাপা কান্নায়

 নক্ষত্রগুলি ঝুলে পড়েছে সরস পৃথিবীর অভিমুখে

 কেঁপে কেঁপে উঠছে ধামসা মাদলের আওয়াজ অন্তরাত্মা কাঁদছে  কৌপিন হারানোর ভয়ে

 এতদিন মুঠো মুঠো আনন্দ ছড়াচ্ছিল পৃথিবী

 বাতাস খুঁজে বের করে আনছিল সুখ

তাও সমুদ্রগর্ভে বিলীন হচ্ছে সন্তাপে 

নিরুত্তাপ ছিল ক্ষুধাগ্নি

 কেন জানিনা কোন বেরসিক আকস্মিক বয়ে নিয়ে এলো এক আকাশ মুখভার করা কালো মেঘ স্বদেশ তথাপি নয় শৃঙ্খলা পরায়ণ

 নইলে কেন পাওয়া যায়না  প্রেমিক প্রেমিকার বিশুদ্ধ প্রেম 

কেন পাওয়া যায় না প্রকৃত দেশ প্রেমিক

 কেন পাওয়া যায় না দুঃখ দারিদ্র নেভানো আলো।  



প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল

সুবর্ণা কর্মকার

প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল

প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল, যেদিন তোর আঁখিতে আমার নামে শ্রাবণ ঝরেছিলো।

সে শ্রাবনে ভিজে ছিলাম আমি, তোর চোখের কালো দ্বীপে হদিশ খুঁজেছিলাম অবশেষে।

প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল,
যেদিন তোর ঠোঁটের মানচিত্রে দ্রাঘিমারেখা গুলো গুনে দেখতাম, 
তোর ভেজা চুলের সুবাসে নিজেকে সুগন্ধি করে তুলতাম।

আমার নিঃশ্বাস জুড়ে হয়তো এখন অখন্ড নীরবতা গোলাকার ধরণী জুড়ে রয়েছে শুধু তোর আগমনী,

প্রেমটা হয়তো সেদিন ছিল,
যেদিন তোর মায়াবী ছায়ার সুপ্ত অবসরে, ঘুমহীন ক্লান্তির ছাপ টা চুম্বনের আকারে মিলিয়ে দিতাম।

যেদিন তোর ঠোঁটের নিকোটিনের বিচ্ছুরিত ধোঁয়া টা অপেক্ষা করত আমার আগমনের জন্য।

আজ হইতো প্রেম টা রয়ে গেছে,
শুধু বদলে গেছে প্রেমের ধরন;
এখন তোর মুঠো মুঠো স্বপ্নের রাজ দরবারে
আর তো ঘটে না আমার নামে অভিস্রবণ।

এখন প্রেমটা শুধু আমার একার,

তুই তো ভুলে গেছিস এখন,
আমি এখন তোর কাছে কাঁটা যুক্ত ক্যাকটাসের ন্যায়,
্যস্ট্রেতে যেভাবে নিকোটিনের ছাই ফেলে অবশেষে।

পরাধীনতার নাগপাশে 

-রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়



ইসিজি রিপোর্টে কে গ্রাফটি এঁকেছিল যন্ত্র

 তাতে ধরা পড়েছিল মানবিকতাবোধ হৃদয় থেকে বেরিয়ে গেছে গঙ্গা জলে ; মহাদেব গঙ্গাকে জটা থেকে মুক্তি দেওয়ায় নরকুলে প্রচুর বিপত্তির চর জেগে উঠেছে দেখে কপিলমুনি অহর্নিশ তপস্যা শুরু করে দেন , দীর্ঘ তপস্যার পর যখন মানুষের মনুষ্যত্ববোধকে তিনি ফেরাতে পারলেন না তখন বাতাস রটনা করে দিল মানুষ আজ অমানুষের দলে ; এই কথা শুনে দানবেরা সহিংস নৃত্য শুরু করে দিল হাঁস,মুর্গী, কোকিলের অঙ্গনে ।সংখ্যায় এরা ভারি বুঝে সত্য নারায়ণ বাবু স্বদেশ থেকে পলায়ন করলেন ,মিথ্যেবাবু রাজাসনে বসে পাকাপোক্ত দলিলে ফরমান চালাতে থাকলো; শয়তান অন্ধকার বেচারা দিনের আলোয় ভদ্রলোকের মুখোশ পড়ে চাণক্যের শ্লোক আওড়াতে থাকলো আর পোঁ-ধরা ডাক্তার বাবু সকলের বুকে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে কানে শুনতে থাকলো নর নারীর হৃৎস্পন্দন । ছন্দবদ্ধ হৃদস্পন্দন নয় জেনে মিথ্যে বাবু রাস্তাঘাট হাট-বাজার বন্ধ করে দিয়ে হুঙ্কার ছাড়তে লাগলো , হুঙ্কারের শব্দে গাছের পাতা ঝরে পড়লো ,ফুল আর পাপড়ি মেলল না, নদী উজানে বইতে শুরু করল ,পরাধীনতার নাগপাশে বিষন্ন হলো প্রাকৃতিক মন ;এটাই ছিল আহাম্মকের প্রথম পর্বের প্রথম কড়চার প্রথম সোপান ।

রস-তত্ত্ব

অরুণ কুমার ঘোষ

রস খুঁজে ফেরো তুমি রস নেই বনেতে

রস আছে জেনো ভাই রসিকের মনেতে। 

রসগোল্লার রস একটুও ভালো নয়

সুগারের সহোদর এতে নেই সংশয়। 

কাঠে কত রস পায় পাখি কাঠঠোকরা

মনোসুখে বিড়ি ফুঁকে রস পায় ছোকরা। 

দুধে নয়, মদে রস তাতে নাই সন্দ

দুধ বেচে মদ খায় গোয়ালা যে নন্দ। 

সত্তরে শাদি করে শুকুরালি রস পায়

বোষ্টম রস পেতে বোষ্টমীর পিছু ধায়। 

নিমপাতা রস দেয় তবে ভাই তিক্ত

নাক চেপে খেয়ে দেখো হবে রোগমুক্ত। 

রাধে আর কেষ্টর আছে বড়ো লীলা-রস

নিষ্কর্মার দল হয়ে পড়ে এতে বশ।

রাজনীতি-রস খেয়ে নেতা হয় চাঙ্গা

এই রসে জনতা কত করে দাঙ্গা। 

রেশনের চালে রস তুল্য যে নাই তার

রাজনীতি নেতারা খেয়ে যায় বারবার।

আমফানি কাটমানি ঘুষে রস মস্ত

তাই আজ নেতারা এতে বড়ো ব্যস্ত। 

আরও ভাই আছে রস মহামারী করোনায়

নার্সিং হোমগুলো দুহাত ভরে নেয়। 

আহা মরি! কত রস আছে সব ধর্মে

এই রস পেতে সব মাতে কত কর্মে।

শাসকেরা রস পায় স্বজনের পোষণে

সবচেয়ে বেশি রস গরিবের শোষণে। 

বলতে যে পারি আমি আরও রস তত্ত্ব

লেগে যাবে আঁতে ঘা হবে উন্মত্ত। 

গলাটিপে ঝুলিয়ে দেবে ওই গাছটায়

পরিবার পরিজন করবে যে হায়! হায়!

আরও কত পাচ্ছি যে বিপদের গন্ধ

তাই এই রসালাপ করিলাম বন্ধ।

 সুন্দরী 

  পারভীন শীলা 


সুন্দরী তুমি,

জোছনার আলোর মতো স্বচ্ছ

প্রকৃতির মতো নির্মল

চাঁদের মতো সত্য।

সুন্দরী তুমি,

চির যৌবনা স্বর্ণালী সকাল

মায়াবী বিকেলের স্নিগ্ধতায়

ঘেরা

অপূর্ব বাংলার অবয়ব।

কবিগুরু

অলোক নস্কর


হাজার লিখি হাজার পড়ি 

   হাজার বিষয় ভাবি ,

      কে-যে কত মহান লেখক

          হরেক রকম দাবি ,

             বড়ো লেখক ছোট লেখক

               তর্কযুদ্ধ চলে ,

                  নানা মানুষ নানান রকম

                     নিজের মতো বলে ,

                        আমি কেবল একটি নামে

                           হ‌ই-যে কুপোকাত ,

                              সে-তো রবীন্দ্রনাথ 

                                  রবীন্দ্রনাথ ।


আমি লেখক-কবি , নয়-তো জানি

   লেখার চেষ্টা করি ,

       ভালো কিছু বিষয় পেলে

          লিখতে কলম ধরি ,

              রবি ঠাকুর আছেন মাথায়

                ভয়-কে করবো জয় ,

                   সহজ সরল লিখবো আমি

                      কঠিন কিছু নয় ,

                         লিখছি আমি বহু রকম

                             করছে কুপোকাত ,

                                সে-তো রবীন্দ্রনাথ

                                    রবীন্দ্রনাথ ।


বিশ্বকবি গুরুদেবের

   চরণতলে বসি ,

     কবি গুরু আলো দেন

        উনি আমার শশী ,

           কবি গুরু পথ দেখাবেন

              ভাবনা আমার কিসে ,

                 কবি গুরুর পথের ধুলায়

                    চাই-যে যেতে মিশে ,

                       গুরুর সুরে সুর মেলাতে

                           হ‌‌ই-যে কুপোকাত ,

                              গুরু আমার রবীন্দ্রনাথ

                                  রবীন্দ্রনাথ ।



তুই যে বড়ই আপন
      শিবশঙ্কর মণ্ডল

তোর নাম কিরে খোকা?
আলু থালু দেখতে বেশ,
টেঁপা গণেশ জালা ভুঁড়ি 
বল কোথায় তোর দেশ?

ঝিঙেখালি কুমড়োখালি বল?
হরপুর ভোজেরহাট বানতলা?
টেরা চোখে তো দেখিস ভারি
ঠোঁটে মুচকি হাসির ছলাকলা।

খোকন সোনা বসো তো দেখি
ভাব না আমি তোর ঠাকুর্দাদা,
বুড়ো আঙুল চুষে মধু পাবি?
নাকি সুরে কাঁদছিস কেন হাঁদা!

রুটি মুড়ি চানা শসা খাবি?
সবই রাখি ঝোলায় ভরে,
পথে থাকি পথই আমার বাড়ি
পথিকদের নিই আপন করে।

তুই থাকবি আমার নাতির মতো
দেখবি পাবি খুবই আদর যতন
দু'জনে থাকব সুখে মাঙা ভাতে
দাদু বলে ডাক, তুই যে বড়ই আপন।।
মেঘবালিকা ও স্বপ্ন

 পারভীন শীলা
অন্ধকার রাত্রি, জঙ্গলের অচেনা পথ,
বালিকার বুকের মধ্যে
শঙ্কা!ভয়!কাঁপুনি!
হঠাৎ অন্য একটি হাতের স্পর্শ। 
শক্ত হাতে ধরে কানে কানে বলছে,
ভয় নেই! আমি তো আছি! 

ঘন বন, মাঝে মাঝে শেয়ালের হাঁক! 
ক্ষুধার্ত বাঘ আর সিংহের গর্জন! 

প্রশ্ন করতে ভুলে গেলো বালিকা 

পাশে থাকা যুবকটিকে, তুমি কে?

কঠিন আলিঙ্গনে বেঁধে যুবকটি
ফিসফিস করে বললো,
চিনতে পারোনি আমায়? 
যারে দেখতে পেলে তোমার সকল 
ভয় কেঁটে যায়, 
আমি সেই গো! 
রাত পোহাবার অনেক বাকি, 
আমার বুকে পড়ে থাকো, 
বন্য পশু কেউ আসবে না! 
ওরা জানে, তোমার আমার কথা। 

অন্ধকারে মুখোমুখি এক অসহায় বালিকা 
অন্তরে ভয়! শঙ্কা! 
তা-ও প্রশ্ন করলো, 
কী জানে ওরা, যা আমি জানিনে?
যুবকটি হেসে বলল, 
ভুলে গেলে আমায়? 
মনে পড়ে সেই বকুলের তলায়? 
আসন পেতে ফুল কুড়াবার কথা? 
মালা গেঁথে আমায় বলতে, 
নিবে গো মালা? ভালোবাসার মালা? 

আমি যত্ন করে মালাটি নিতাম, 
তুমি হেসে লুটোপুটি খেতে, 
তোমার ঐ চাঁদপানা মুখটিতে
আমার ভালোবাসার প্রলেপ বুলিয়ে দিতাম! 

বালিকা অবাক বিস্ময়ে মুখ তুলে বলল, 
কী বলছো তুমি! সে আবার কবেকার কথা! 
জানিনাতো! মনে পড়ে না তো! 

যুবকটি এবার নড়ে চড়ে ওঠে, 
বলে, এইতো, এবার সব মনে পড়বে। 
বলেই যুবকটি অদৃশ্য হয়ে যায়। 

বালিকা চিৎকার করে ওঠে, 
যেওনা! আমি একা এই বনে 
কী করে থাকবো! কি পাষাণ তুমি! 
এভাবে কি চলে যেতে হয়! 
আমি চিনেছি তো!
তুমি আমার কল্পনায় আসো, 
আবার চলে যাও!
এখনো তাই করছো? 

যুবকটি আবার ফিরে এলো 
বলল, হাতটি ধরো,
চলো তোমায় নিয়ে যাই।
বালিকা ঘুম কাতুরে কন্ঠে প্রশ্ন করলো, 
কোথায়? 

যুবকটি বলল,
তোমার মেঘ বালিকার দেশে।
বালিকার প্রশ্ন, তুমি যাবে না?
হ্যাঁ গো। যাবো বৈকি।
তোমার মেঘ বালিকার দেশ
সে তো আমার ও দেশ।
চাওয়া-পাওয়া
    পারভীন শীলা

না, আর লিখবো না, আর ভাববো না তোমাকে,
এতো দিনের শুভ্রতায় ঘেরা এই আমি,
হারিয়ে যাচ্ছি, 
একটু একটু করে নষ্টালজিয়ায়
জড়িয়ে পড়ছি।
না-না-না,আমি চাই না জড়াতে!
আমি চাই না বন্ধুত্ব! চাই না ভালোবাসা! 
বন্ধুত্বের আড়ালে যে হীনমন্যতা আছে, 
তা আমাকে ব্যথিত করে! কাঁদায়!
আমি আর কাঁদতে চাইনা! 
পাওয়া না পাওয়ার হিসেবও কষতে
চাই না।
ভাঙতে চাই না আমি,
ভাঙনের সুর বড় মর্মান্তিক! 
নতুন করে কিছু গড়তে চাই না!
ভাঙা গড়ার খেলায় আর নিজেকে 
নামাতে চাই না, 
কল্প তরুলতায় ঘেরা এই মনটাকে 
আর বাঁধতে চাই না, 
ছিন্ন বীণার সুরে আহত হতে চাই না! 

তোমার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে চাই না! 
কামনার আগুনে নিজেকে আর পোড়াতে 
চাই না!
চৌকাঠ পেরিয়ে ও পথে আর পা
বাড়াতে চাই না, 
যে পথে হাঁটতে গেলে হোচট খেতে হয়! 
যন্ত্রণায় কুঁকড়ে মরতে হয়! 
পায়ে রক্ত ঝরাতে হয়! 
আমি সে পথে হাটতে চাই না! 

ক্ষমা করো আমায়, 
আমি চাই না তোমাকে। 

যে পথে মরীচিকার পিছনে ছুটতে হয় 
কালের ধ্বনিতে আমি ও পথ
মাড়াতেও চাই না।
ফুসলে ওঠা সাগরের সলিল সমাধীতে 
নিজেকে ডোবাতে চাই না! 

শুভ্রতার আঁচলে জড়িয়ে 
ঐ নীল আকাশে, 
আমি ভাসতে চাই -ভাসাতে চাই। 
পবিত্রতার আলিঙ্গনে
আমাকে আমি বাঁধতে চাই, 
উম্মুক্ত করতে চাই।
পুষ্পবিকাশ 
রাণু সরকার
=================== 
হৃদয়ের প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত পুষ্পবিকাশ করতে পারো-বড্ড বিয়োগ ব্যথা!
হৃদয়ে পিঁজরা বন্দি পাখিটা আজ ওপার বাংলায়-পাঠিয়ে দিলাম পিঁজরা খুলে!
ঝরা ফুলের মালা-পাঠালাম পাখির ঠোঁটে!
সযত্নে রেখো-পদ্মার জলে পরিবর্জন করোনা!
ব্যাথার বাদ্যযন্ত্র টা আবার নবরূপে সেঁজে ও বেজে উঠল সুরেলাধ্বনিতে!
অরুন্ধতী প্রত্যাশায়!
বিজ্ঞান বনাম ভাইরাসে 

শিবশঙ্কর মণ্ডল

এ এক অদভুৎ পৃথিবী 
এখানে অজানা শব্দরা ভাসছে 
অচেনা বলয়ে দুরত্ব বাড়িয়ে ,
পরিচিতরা চেনা ছকের বাইরে 
নিজেদেরকে আত্মগোপনে হারিয়ে ।

এ পৃথিবীতে পরস্পরের হুংকার নেই 
শক্তি প্রদর্শনের গোলাগুলির আওয়াজ নেই 
একে অপরের দোষারোপের রাজনীতিও নেই ।

এ পৃথিবীতে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে
দেশ জাতি সমাজ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের 
নিজ নিজ সভ্যতা অক্ষুণ্ণ রাখার একান্ত লড়াইয়ে 
ভবিষ্যতে ভাইরাস মুক্ত পৃথিবী পেতে।

এ পৃথিবীটা যেন ভাইরাসের অধিকারে
ছিনিয়ে নিতে চায় তিলে তিলে
মানুষের মৃত্যুর সারি নিশ্চিতে
ধ্বংস করতে চায় বিজ্ঞানের গর্বে।

এ পৃথিবীর ভাইরাস আতঙ্কের যুদ্ধে
সৈন্য গোলা বারুদ যুদ্ধ বিমান নেই 
সড়ক জল আকাশে হাঙ্গামা নেই 
রাসায়নিক অস্ত্র পরমাণু বোমা নেই
বিধাতা জোতির্বিজ্ঞানের আশীর্বাদ নেই।

শুধুই ডাক্তার সেবিকা ওষুধ প্রশাসন 
লড়াইয়ে বিজ্ঞান বনাম ভাইরাসে ।
কৃষ্ণচূড়ার নীচে
পারভীন শীলা 

কৃষ্ণচূড়ার নীচে দাঁড়িয়ে ভাবছি
আজ তুমি নেই
আছে স্মৃতিটুকু
যতটুকু দিয়েছিলে আমায়
গ্রহণ করেছি ততটুকু। 

কাক ডাকা সেই আবছা আলোয় ভোরে 
বকুলের গন্ধে আকুল
মনের দরজা খুলে 
শিশিরে ভেজা পায়ে
মেঠোপথ পেরিয়েছি কত
দু হাতের কঠিন আলিঙ্গনে।

ডোবা, পুকুরের জলে ভীজে
বালিয়াড়ি হাঁসের খোঁজে 
কখনো বিলের ধারে,
শাপলা শালুকের খোঁজে 
ডুব দিয়ে পানকৌড়ির মতো জলে,
আরো কতো বনের ভিতর
বেতের কাঁটার ঘায়ে,
কেটেছে পা ঝরেছে রক্ত,
তাও দৌড়েছি হাত ধরে
বউ কথা কও পাখিটির খোঁজে, 
আম গাছের মগ ডালে বসে
পাশাপাশি -
কাঁচা আমের স্বাদে
ঝুলিয়েছি পা
মনের আনন্দে। 

এ ভাবে 
   সকাল গড়িয়ে দুপুর, 
   দুপুর গড়িয়ে বিকেল,
   সারাদিনের ছুটোছুটি 
          খুনসুঁটি 
   সন্ধ্যেয় মায়ের বকুনি।

সবই পড়ে মনে
শুধু নেই তুমি
বিদায়ের বেলায় বলেছিলে
           বন্ধু
এবার হলো ছুটি
ভুলে যেও সব আমার দেয়া প্রীতি। 
সব ভুলে গেছি
পড়ে শুধু মনে
কৃষ্ণচূড়ার নীচে
তোমার আমার মন দেয়া নেয়ার
  সেই তিথি।
সংশয়
সুমিতা মুখোপাধ্যায়


বাতাসের মত আমি সহজ হয়েছি;
আলোর ভুবনে তাই হাওয়াপাখি হয়ে
ডানার বিস্তার থেকে সুরভি ছাড়াই।
অনুপ্রবেশে আমার কৃপণের মুঠি
খুলে গিয়ে, বেড়ে গেছে আলোর সঞ্চয়।

আমার পরশ পেয়ে যে - মুকুলগুলি
ধীরে ধীরে পূর্ণতায় প্রকাশিত হয়ে
আমাকে বিখ্যাত করে, শুধু জেনে রেখো -
তোমার রচিত কোন কুপ্রস্তাব মেনে
আমি আগুনের ভাষা
ফোটাব না কখনই। ক্রমপ্রসারিত
আলোর পরিধি থেকে ফুলের বিরুদ্ধে
কথা বলবার আগে আত্মউন্মোচনে
পাতার সংশয়টুকু বুঝে নিতে হয়।
পার্থক্য 
পারভীন শীলা 

আকাশে উড়ছে মেঘ 
ধরতে চাইছো তুমি,
আকাশের নীচে মেঘের 
যে জল,
তা ধরতে চাইছি আমি। 
চাওয়া পাওয়ার এই বিস্তর ফারাকে
তুমি প্রকৃতির পিছনে ছুটছো
আর আমি
প্রকৃতির কোলে ঘুমিয়ে আছি।