ত্রিলোচন সাহিত্য ভুবন v

পরাধীনতার নাগপাশে 

-রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়



ইসিজি রিপোর্টে কে গ্রাফটি এঁকেছিল যন্ত্র

 তাতে ধরা পড়েছিল মানবিকতাবোধ হৃদয় থেকে বেরিয়ে গেছে গঙ্গা জলে ; মহাদেব গঙ্গাকে জটা থেকে মুক্তি দেওয়ায় নরকুলে প্রচুর বিপত্তির চর জেগে উঠেছে দেখে কপিলমুনি অহর্নিশ তপস্যা শুরু করে দেন , দীর্ঘ তপস্যার পর যখন মানুষের মনুষ্যত্ববোধকে তিনি ফেরাতে পারলেন না তখন বাতাস রটনা করে দিল মানুষ আজ অমানুষের দলে ; এই কথা শুনে দানবেরা সহিংস নৃত্য শুরু করে দিল হাঁস,মুর্গী, কোকিলের অঙ্গনে ।সংখ্যায় এরা ভারি বুঝে সত্য নারায়ণ বাবু স্বদেশ থেকে পলায়ন করলেন ,মিথ্যেবাবু রাজাসনে বসে পাকাপোক্ত দলিলে ফরমান চালাতে থাকলো; শয়তান অন্ধকার বেচারা দিনের আলোয় ভদ্রলোকের মুখোশ পড়ে চাণক্যের শ্লোক আওড়াতে থাকলো আর পোঁ-ধরা ডাক্তার বাবু সকলের বুকে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে কানে শুনতে থাকলো নর নারীর হৃৎস্পন্দন । ছন্দবদ্ধ হৃদস্পন্দন নয় জেনে মিথ্যে বাবু রাস্তাঘাট হাট-বাজার বন্ধ করে দিয়ে হুঙ্কার ছাড়তে লাগলো , হুঙ্কারের শব্দে গাছের পাতা ঝরে পড়লো ,ফুল আর পাপড়ি মেলল না, নদী উজানে বইতে শুরু করল ,পরাধীনতার নাগপাশে বিষন্ন হলো প্রাকৃতিক মন ;এটাই ছিল আহাম্মকের প্রথম পর্বের প্রথম কড়চার প্রথম সোপান ।

রস-তত্ত্ব

অরুণ কুমার ঘোষ

রস খুঁজে ফেরো তুমি রস নেই বনেতে

রস আছে জেনো ভাই রসিকের মনেতে। 

রসগোল্লার রস একটুও ভালো নয়

সুগারের সহোদর এতে নেই সংশয়। 

কাঠে কত রস পায় পাখি কাঠঠোকরা

মনোসুখে বিড়ি ফুঁকে রস পায় ছোকরা। 

দুধে নয়, মদে রস তাতে নাই সন্দ

দুধ বেচে মদ খায় গোয়ালা যে নন্দ। 

সত্তরে শাদি করে শুকুরালি রস পায়

বোষ্টম রস পেতে বোষ্টমীর পিছু ধায়। 

নিমপাতা রস দেয় তবে ভাই তিক্ত

নাক চেপে খেয়ে দেখো হবে রোগমুক্ত। 

রাধে আর কেষ্টর আছে বড়ো লীলা-রস

নিষ্কর্মার দল হয়ে পড়ে এতে বশ।

রাজনীতি-রস খেয়ে নেতা হয় চাঙ্গা

এই রসে জনতা কত করে দাঙ্গা। 

রেশনের চালে রস তুল্য যে নাই তার

রাজনীতি নেতারা খেয়ে যায় বারবার।

আমফানি কাটমানি ঘুষে রস মস্ত

তাই আজ নেতারা এতে বড়ো ব্যস্ত। 

আরও ভাই আছে রস মহামারী করোনায়

নার্সিং হোমগুলো দুহাত ভরে নেয়। 

আহা মরি! কত রস আছে সব ধর্মে

এই রস পেতে সব মাতে কত কর্মে।

শাসকেরা রস পায় স্বজনের পোষণে

সবচেয়ে বেশি রস গরিবের শোষণে। 

বলতে যে পারি আমি আরও রস তত্ত্ব

লেগে যাবে আঁতে ঘা হবে উন্মত্ত। 

গলাটিপে ঝুলিয়ে দেবে ওই গাছটায়

পরিবার পরিজন করবে যে হায়! হায়!

আরও কত পাচ্ছি যে বিপদের গন্ধ

তাই এই রসালাপ করিলাম বন্ধ।

 সুন্দরী 

  পারভীন শীলা 


সুন্দরী তুমি,

জোছনার আলোর মতো স্বচ্ছ

প্রকৃতির মতো নির্মল

চাঁদের মতো সত্য।

সুন্দরী তুমি,

চির যৌবনা স্বর্ণালী সকাল

মায়াবী বিকেলের স্নিগ্ধতায়

ঘেরা

অপূর্ব বাংলার অবয়ব।

কবিগুরু

অলোক নস্কর


হাজার লিখি হাজার পড়ি 

   হাজার বিষয় ভাবি ,

      কে-যে কত মহান লেখক

          হরেক রকম দাবি ,

             বড়ো লেখক ছোট লেখক

               তর্কযুদ্ধ চলে ,

                  নানা মানুষ নানান রকম

                     নিজের মতো বলে ,

                        আমি কেবল একটি নামে

                           হ‌ই-যে কুপোকাত ,

                              সে-তো রবীন্দ্রনাথ 

                                  রবীন্দ্রনাথ ।


আমি লেখক-কবি , নয়-তো জানি

   লেখার চেষ্টা করি ,

       ভালো কিছু বিষয় পেলে

          লিখতে কলম ধরি ,

              রবি ঠাকুর আছেন মাথায়

                ভয়-কে করবো জয় ,

                   সহজ সরল লিখবো আমি

                      কঠিন কিছু নয় ,

                         লিখছি আমি বহু রকম

                             করছে কুপোকাত ,

                                সে-তো রবীন্দ্রনাথ

                                    রবীন্দ্রনাথ ।


বিশ্বকবি গুরুদেবের

   চরণতলে বসি ,

     কবি গুরু আলো দেন

        উনি আমার শশী ,

           কবি গুরু পথ দেখাবেন

              ভাবনা আমার কিসে ,

                 কবি গুরুর পথের ধুলায়

                    চাই-যে যেতে মিশে ,

                       গুরুর সুরে সুর মেলাতে

                           হ‌‌ই-যে কুপোকাত ,

                              গুরু আমার রবীন্দ্রনাথ

                                  রবীন্দ্রনাথ ।



তুই যে বড়ই আপন
      শিবশঙ্কর মণ্ডল

তোর নাম কিরে খোকা?
আলু থালু দেখতে বেশ,
টেঁপা গণেশ জালা ভুঁড়ি 
বল কোথায় তোর দেশ?

ঝিঙেখালি কুমড়োখালি বল?
হরপুর ভোজেরহাট বানতলা?
টেরা চোখে তো দেখিস ভারি
ঠোঁটে মুচকি হাসির ছলাকলা।

খোকন সোনা বসো তো দেখি
ভাব না আমি তোর ঠাকুর্দাদা,
বুড়ো আঙুল চুষে মধু পাবি?
নাকি সুরে কাঁদছিস কেন হাঁদা!

রুটি মুড়ি চানা শসা খাবি?
সবই রাখি ঝোলায় ভরে,
পথে থাকি পথই আমার বাড়ি
পথিকদের নিই আপন করে।

তুই থাকবি আমার নাতির মতো
দেখবি পাবি খুবই আদর যতন
দু'জনে থাকব সুখে মাঙা ভাতে
দাদু বলে ডাক, তুই যে বড়ই আপন।।
মেঘবালিকা ও স্বপ্ন

 পারভীন শীলা
অন্ধকার রাত্রি, জঙ্গলের অচেনা পথ,
বালিকার বুকের মধ্যে
শঙ্কা!ভয়!কাঁপুনি!
হঠাৎ অন্য একটি হাতের স্পর্শ। 
শক্ত হাতে ধরে কানে কানে বলছে,
ভয় নেই! আমি তো আছি! 

ঘন বন, মাঝে মাঝে শেয়ালের হাঁক! 
ক্ষুধার্ত বাঘ আর সিংহের গর্জন! 

প্রশ্ন করতে ভুলে গেলো বালিকা 

পাশে থাকা যুবকটিকে, তুমি কে?

কঠিন আলিঙ্গনে বেঁধে যুবকটি
ফিসফিস করে বললো,
চিনতে পারোনি আমায়? 
যারে দেখতে পেলে তোমার সকল 
ভয় কেঁটে যায়, 
আমি সেই গো! 
রাত পোহাবার অনেক বাকি, 
আমার বুকে পড়ে থাকো, 
বন্য পশু কেউ আসবে না! 
ওরা জানে, তোমার আমার কথা। 

অন্ধকারে মুখোমুখি এক অসহায় বালিকা 
অন্তরে ভয়! শঙ্কা! 
তা-ও প্রশ্ন করলো, 
কী জানে ওরা, যা আমি জানিনে?
যুবকটি হেসে বলল, 
ভুলে গেলে আমায়? 
মনে পড়ে সেই বকুলের তলায়? 
আসন পেতে ফুল কুড়াবার কথা? 
মালা গেঁথে আমায় বলতে, 
নিবে গো মালা? ভালোবাসার মালা? 

আমি যত্ন করে মালাটি নিতাম, 
তুমি হেসে লুটোপুটি খেতে, 
তোমার ঐ চাঁদপানা মুখটিতে
আমার ভালোবাসার প্রলেপ বুলিয়ে দিতাম! 

বালিকা অবাক বিস্ময়ে মুখ তুলে বলল, 
কী বলছো তুমি! সে আবার কবেকার কথা! 
জানিনাতো! মনে পড়ে না তো! 

যুবকটি এবার নড়ে চড়ে ওঠে, 
বলে, এইতো, এবার সব মনে পড়বে। 
বলেই যুবকটি অদৃশ্য হয়ে যায়। 

বালিকা চিৎকার করে ওঠে, 
যেওনা! আমি একা এই বনে 
কী করে থাকবো! কি পাষাণ তুমি! 
এভাবে কি চলে যেতে হয়! 
আমি চিনেছি তো!
তুমি আমার কল্পনায় আসো, 
আবার চলে যাও!
এখনো তাই করছো? 

যুবকটি আবার ফিরে এলো 
বলল, হাতটি ধরো,
চলো তোমায় নিয়ে যাই।
বালিকা ঘুম কাতুরে কন্ঠে প্রশ্ন করলো, 
কোথায়? 

যুবকটি বলল,
তোমার মেঘ বালিকার দেশে।
বালিকার প্রশ্ন, তুমি যাবে না?
হ্যাঁ গো। যাবো বৈকি।
তোমার মেঘ বালিকার দেশ
সে তো আমার ও দেশ।
চাওয়া-পাওয়া
    পারভীন শীলা

না, আর লিখবো না, আর ভাববো না তোমাকে,
এতো দিনের শুভ্রতায় ঘেরা এই আমি,
হারিয়ে যাচ্ছি, 
একটু একটু করে নষ্টালজিয়ায়
জড়িয়ে পড়ছি।
না-না-না,আমি চাই না জড়াতে!
আমি চাই না বন্ধুত্ব! চাই না ভালোবাসা! 
বন্ধুত্বের আড়ালে যে হীনমন্যতা আছে, 
তা আমাকে ব্যথিত করে! কাঁদায়!
আমি আর কাঁদতে চাইনা! 
পাওয়া না পাওয়ার হিসেবও কষতে
চাই না।
ভাঙতে চাই না আমি,
ভাঙনের সুর বড় মর্মান্তিক! 
নতুন করে কিছু গড়তে চাই না!
ভাঙা গড়ার খেলায় আর নিজেকে 
নামাতে চাই না, 
কল্প তরুলতায় ঘেরা এই মনটাকে 
আর বাঁধতে চাই না, 
ছিন্ন বীণার সুরে আহত হতে চাই না! 

তোমার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে চাই না! 
কামনার আগুনে নিজেকে আর পোড়াতে 
চাই না!
চৌকাঠ পেরিয়ে ও পথে আর পা
বাড়াতে চাই না, 
যে পথে হাঁটতে গেলে হোচট খেতে হয়! 
যন্ত্রণায় কুঁকড়ে মরতে হয়! 
পায়ে রক্ত ঝরাতে হয়! 
আমি সে পথে হাটতে চাই না! 

ক্ষমা করো আমায়, 
আমি চাই না তোমাকে। 

যে পথে মরীচিকার পিছনে ছুটতে হয় 
কালের ধ্বনিতে আমি ও পথ
মাড়াতেও চাই না।
ফুসলে ওঠা সাগরের সলিল সমাধীতে 
নিজেকে ডোবাতে চাই না! 

শুভ্রতার আঁচলে জড়িয়ে 
ঐ নীল আকাশে, 
আমি ভাসতে চাই -ভাসাতে চাই। 
পবিত্রতার আলিঙ্গনে
আমাকে আমি বাঁধতে চাই, 
উম্মুক্ত করতে চাই।